কেন এত নৈতিকতার অবক্ষয়?

ছেলে সকাল সকাল হন-হন করে বেরিয়ে যাচ্ছে কলেজে যাবে, মা পিছু-পিছু ছুটে আসে!

বাবা কোথায় যাচ্ছিস?

কেন মা কলেজে যাচ্ছি,

কখন ফিরবি?

এই তো ক্লাস শেষেই ফিরব মা, কেন কি হয়েছে, তোমাকে এতো আতঙ্কিত দেখাচ্ছে কেন মা?

না কিছু না-এমনি, ঠিক মত দেখে শুনে যাবি, রাস্তা পার হবার আগে খুব খেয়াল রাখবি, কোন ঝামেলার মধ্যে যাসনে। বাহিরের খাবার খাবিনে যেন।

আচ্ছা ঠিক আছে, তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবেনা, আমি আসি মা……

সন্তান চলে যায়, তার চলে যাওয়া পথ পানে চেয়ে থাকে মা। যতো দুর দৃষ্টি যায়, মনের ঘরে ঝরতে খাকে দ্বিধা-সংশয়, সবাই বলে মায়ের মন নাকি এমনই হয়।

অন্যদিকে তাড়া হুরো করে বাবা বের হবার ঠিক আগ মুহুর্তে মা বল্লেন, বলছিলাম কখন ফিরবে?

প্রতিদিনের মত বাবা বিরক্ত, তোমাকে বলেছি সকালে বের-হবার আগে পিছু ডাকবে না, পেছন থেকে কিছু বলবে না।

থতো-মতো হয়ে মা প্রতিদিন এভাবেই নিজের মধ্যে নিজে গুটিয়ে যায়। মনের মধ্যে ভয় আর বিপদের আশঙ্কা বারছে প্রতিদিন।সবায় বেরিয়ে গেলে পরে ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে স্কুলের উদ্দ্যেশে বের হন তিনি, মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাজার করে ঘরে ফেরেন, রান্না সেরে ঘর গুছিয়ে আবার বেরিয়ে পরেন মেয়ের স্কুল ছুটির সময়।

মনের ভিতর শুধু অস্থির শঙ্কা: কি হয়,না যানি কি হয়। যদি ছেলেধরা বলে সবায় তেড়ে আসে। মারতে শুরু করে, পেটাতে শুরু করে, তাহলে কি হবে!কি ভাবে প্রতিরোধ করবে তাদের, কি ভাবে বোঝাবে তার সন্তান এই স্কুলে পড়ে, তাকে প্রতিদিন মেয়েকে দিয়ে যেতে হয় আবার ছুটি হলে বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়?চারিদিকে অস্থিরতা, নৈরাজ্য, হত্যা, গুম,খুন, ধর্ষন, নির্যাতন, দূর্নীতি, মাদক, ঘুষ, অর্থ-পাচার, ধর্মকে পুজি করে নর-ক্ষাদকের উল্লাস, আর কত, আর কত এভাবে সহ্য করা যায়!

মায়ের মনে অস্থিরতার চাপ বারতে থাকে। মায়ের মন গুমরে গুমরে কাদেঁ। কি করে সম্ভব, কি ভাবে সম্ভব, কেন মানুষের মূল্যবোধের এতো অভাব? কেন নৈতিকতার এতো অবক্ষয়? সহজ মায়ের মন কিছুতেই বুঝ মানে না। কোন সান্তনা খুজে পায়না।

আসলেই কি সান্তনা নেই, সত্যিকি মায়ের মত আজ আমরা চিন্তিত বিচলিত নই? কেন আজ মানুষ হয়ে পরছে এতো হিংস্র, নিষ্ঠুর, অমানবিক? কেন আজ মানবিক মূল্যবোধে ধরেছে অবক্ষয়ের ঘুন পোকা? আজ স্কুল শিক্ষক, মাদ্রাসার হুজুরের কাছে অথবা ধর্ম যাজক, পুরহিত, ঠাকুর কারো কাছে কোমল মতি শিশু ছাত্রী নিরাপদ নয়, ডাক্তারের কাছে রোগী নিরাপদ নয়, পায়ে হাটা পথটাও পথিকের জন্য নীরাপদ নয়, খাদ্যে ভেজাল, নেতা আর নিতৃত্বে ভেজাল -উত্তরনের পথ কোথায়?

সহসা মায়ের মনটা আবার অস্থির হয়ে পরে। তবে কি উত্তরনের কোন পথ নেই, তবে কি আমাদের জীবনের কোন আশা নেই, তবে কি আমাদের সন্তানদের জন্য কোন নিরাপদ আগামী নেই? আমাদের এই মানবিক বিপর্যয়ের থেকে মুক্ত হবার কি কোন পথ নেই? সত্যের পথ, মুক্তির পথ, অনন্ত জীবনের পথ।

অনেক গুল প্রশ্নের বোঝা নিয়ে মা হাটতে থাকে নত মুখে-

মেয়ের বান্ধোবী গ্লোরীয়ার মায়ের কথা গুল খুব মনে হচ্ছিল। গত সপ্তাহেও তার সাথে স্কুল প্রাঙ্গনে দাড়িয়ে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন “আসলেকি জানেন আপা, আমরা শাস্তির ভয়ে ধর্ম পালন করি। আমাদের ভিতরে মন্দতার শক্তি আমাদের ভুলের পথে টানে। আমরা ভক্তি পূর্ন অন্তরে ধার্মীক হতে চাই না, ভালবেসে ইশ্বরের সেবা করতে চাইনা, যার কারনে আমাদের ভিতরের মন্দতার শক্তি দিনে দিনে আমাদেরকে মানবিক অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে এতো বিপর্যয়। এখন আমাদের কে জীবন্ত ইশ্বরের চরণে নত হয়ে ক্রন্দন করতে হবে যেন তিনি আমাদের দেশ কে মুক্ত করেন।

ঠিক তার পরের দিনের ঘটনা, ছেলে ধরা সন্দেহে গন পিটুনিতে তাকে জীবন দিতে হলো। তার সমস্ত প্রতিরোধ শুধু আর্তনাদ হয়ে বাতাস ভারি করেছিলো, কিন্তু মানুষ রুপী পিশাচের মন ফেরাতে পারেনি। তার দগ-দগে রক্তের ক্ষত স্তৃতি হয়ে আছে স্কুল প্রাঙ্গনে। সব চলছে আগের মত। সব চলতে থাকে নিজ নিয়মে, কিন্তু যেই সন্তান টি তার মা নামক বিশাল এক মানবিকতার আশ্রয় হারাল, সেই সন্তান আগামীতে মানবিকতার কোন আদর্শে বড় হবে? তার বুকের খুব গভীরে, খুব গভীরে, কোন মানবিকতার বৃক্ষ বড় হবে?

বলো বিবেক!

কে দেবে এর উত্তর…..

Follow me

You may also like...