কে স্বর্গে যাবে ?
নির্জন পাহাড়ের অন্ধকার গলির মুখ, এবরো-থেবরো পথ, বার-বার ওচোট খেতে হচ্ছে, ভীরু-ভীরু সাবধানে অনেক হিসেব করে পা ফেলতে হচ্ছে। নাকে এসে লাগছে অবারিত সবুজের ঘ্রাণ। ভৌতিক নিস্তব্ধতার ধ্যানে ডুবে আছে চারপাশ। দুরে কোথাও একটানা ক্লান্তিহীন গড়িয়ে পরছে ঝর্ণাধারা। মাঝে-মাঝে পাখির কলকাকলী যেন চিরহরিৎ এর নিদ্রা ভেঙ্গে দিচ্ছে। প্রশান্তির ঘুম হঠাৎ ব্যাঘাত ঘটায় বিরক্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিরহরিৎ। ধরণী কেঁপে-কেঁপে ওঠে। ঝড়ো বাতাসের বিভ্রান্তি ভুলতেই প্রেমিকের সঙ্গ ছেড়ে ডানায় ভর করে সহসাই উড়ে যায় পাখিদের দল, হঠাৎ আসা ভয় থেকে মুক্তি পেতে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বিশাল সমুদ্রের ঢেউ এসে ভেঙ্গে পরে, জল শুধু নোনা জল। সমুদ্র চিলেরা দল বেধে নোনা জলে নিজেদের ভেজাচ্ছে খাদ্যের খোঁজে। বহু দূর থেকে উড়ে এসে ঝুপ করে পানিতে ডুব মেরে মুখে তুলে নেয় আহার, ফিরে যায় সাথী দের মাঝে। তারপর আবার ডানায় ভর করে প্রতিক্ষা, শুধু প্রতিক্ষা। সমুদ্রের গর্জন আর ঝড়ো বাতাসের শব্দ কানে এসে বাজছে। অন্তপুরে হচ্ছে তুমুল আলোড়ন।
সকালের সূর্য উঠেছে বহু আগে। সূর্যের তেজ বাড়ছে, চির-চির করে নোনা-ঘাম ঝরছে শরীর থেকে, আশে-পাশে ঘর-বাড়ি, জন বসতি কোন কিছুর অস্তিত্বই এখন অনুভব করা যাচ্ছে না ।
অনেকক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত লোকটি এখন মাথা নত করে-মুখে হাত দিয়ে বসে আছে পাথরের একটা উচু ঢিবিতে। হঠাৎ করে তার আশে-পাশে কোনো মানব প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করে অন্ধ লোকটি বলে উঠলেন,
কিডা ভাই?
আগন্তুক: আমি এক অচিন পথিক, তা আপনি একেন একা-একা বসে কি করছেন? অন্ধ: ভাই আমি একজন অন্ধ মানুষ, দয়াকরি আপনি আমাক বুলতি পারেন “কোন পথে গেলি আয়না মহল যাওয়া যাবিনি?”
এবার অন্য লোকটি বললো, ও আপনিও তাহলি আয়না মহল যাবেন, তা চলেন আমার সাথে। আমিওতো সেকেনেই যাচ্ছি ।
তারপর দুজনেই এক সাথে পাহাড়ের এবরো-থেবরো পথ হাটতে লাগল। এটা-সেটা গল্প করতে লাগল। এই ভাবে তারা হাটছে আর হাটছে, ঘুরছে আর ঘুরছে, সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার আগমনি ঘন্টা বেজে উঠল, পথ তবু শেষ হয় না।
অকস্মাৎ অন্ধ লোকটি জিজ্ঞেস করল অন্য জনকে, বলি ও ভাই ! গায়ে তো আর বল পাচ্ছি নে, আর কতদূর?
অন্য লোকটি তখন বললো, ভাইগো আমিও তো কিছু বুঝতি পারছি নে, সারাদিন ধরে শুধু হাটেই চলিছি, এদিক পথও শেষ হচ্ছে না, আবার আয়না মহলও খুঁজে পাচ্ছিনে, এ-কোন জ্বালায় পলাম, ওভাই!
অন্ধ-বললো: এ আপনি কি বলছেন ভাই! আপনি কি তাহলি আয়না মহল চেনেন না?
প্রতিউত্তরে লোকটি বললো, ভাইগো, সত্যি বুলতি এই আয়না মহল আমিও চিনিনে, আপনের মত আমিও সেই আয়না মহলের পথ খুঁজে বেরাচ্ছি। তো অনেক দিনের পথ পারি দিয়ে আজই একেনে আলাম, তাছারা ব্যপার হচ্ছে কি, আমি যদি ওই আয়না মহল চিনতাম তালি কি আর সারাদিন আপনাকে নিয়ে এম্মা করি ঘুরিই বেরাতাম? আমি আগেই সেকেন যায়িই বসি থাকতাম।
প্রিয় বন্ধু ! এবার আসুন গল্পটা নিয়ে একটা পোষ্ট মডেম হওয়া দরকার।
আমরা স্বর্গে যেতে চাই সবাই, কিন্তু মরতে চাই কতজনে? হয়ত সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে আমরা কেউ যেতে চাইনা, কিন্তু চলে যেতে হবে এটাই সত্য। নির্মম এই সত্য মেনে নিয়েই এক দিন সবাই চলে যায়, তবু প্রশ্ন এসে ভর করে মনের গহীন কোনে, “স্বর্গে কে যাবে”? হয়ত খুব সহজ প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর?
আসলেই কি বলা সহজ কে স্বর্গে যাবে? বলা খুব মুসকিল। একটা বিষয় কিন্তু নিশ্চিত বলা যায় সেটা হচ্ছে মৃত্যুর পর আমাদের জন্য রয়েছে একটা আশ্চর্য হবার বিশেষ ব্যাবস্থা। সেটা হচ্ছে এই পৃথিবীতে থাকা অবস্থাতে আমরা যাকে ভেবে নিয়েছি যে এই লোকটি নরকে যাবে, কিন্তু দেখা গেল তার কোন কাজে উপর-ওয়ালা খুশি হয়ে তাকে স্বর্গে নিয়েছেন, আবার যিনি স্বর্গে যাবেন বলে সমাজের সব লোক ধারণা করে রেখেছেন হয়ত তিনি সবার আগে নরকে বসে আছেন। তো এই যখন অবস্থা তখন অবশ্যই আমরা একজন আরেকজনের ভাল-মন্দ বিচার না করে যেন সৃষ্টি কর্তার ভালবাসা বোঝার চেষ্টা করি। তিনি আমাদের ভালবেসে সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা তার এবাদত করি, তার উপর নির্ভর করতে পারি, কেননা যে কেউ তার উপর ঈমান আনে, সে কখনো ধ্বংস হবেনা কিন্তু অনন্ত জীবন পাবে।
আসুন! এই জগতেই আমরা সেই অনন্ত দয়াবানের অন্নেষণ করি। অন্তর চোখে খুজে দেখি, অন্তর থেকে চেয়ে দেখি, অবশ্যই আমাদের ডাক তিনি শুনবেন। আমরা যেন বিভ্রান্ত না হই। অজ্ঞতার পিছে ঘুরে-ঘুরে বেলা শেষ হবার আগেই যেন আমরা সত্যের কাছে আসতে পারি, যেন আয়না মহলে প্রবেশের পথ খুজে পেতে পারি।
- Why is so much moral degradation? - August 26, 2019
- কেন এত নৈতিকতার অবক্ষয়? - August 26, 2019
- Why do we prioritize our self-interest first? - July 11, 2018