প্রতিদিন তুমি কিসের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছো ?
এইতো সেদিনই প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হলো বিশ্বজিতকে, নৃশংস এবং নিষ্ঠুরভাবে মিলনকে হত্যা করা হলো, বাদ গেল না রাজনও। প্রতিদিনের নৃশংস নিষ্ঠুরতায় এমন করে লোকচক্ষুর অন্তরালে হারিয়ে যাচ্ছে অগনিত কোমল মুখ। পায়ুপথে এয়ারকম্প্রেসারের মাধ্যমে বাতাস ঢুকিয়ে কিশোর হত্যা করে, পথের পাশে ডাষ্টবিনে বাক্স বন্দি শিশুর লাশ ফেলে, মায়ের বুক খালি করে, জাতির বিবেকের নির্লজ্জ আস্ফালন “আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়া গেছে”। সাধারণ জনতা নির্বাক, হজম করতে কষ্ট হয়, কিন্তু প্রভাবিত হতে দেরি নেই। তাই খুব সহজে আমরা শিখে নিলাম, যাই হোক না কেন – সবই তো আল্লাহর মাল।
প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বাড়ছে গৃহকর্মী নির্যাতন, চারিদিকে চলছে গণধর্ষণের মহোৎসব, পৈশাচিক এই ধর্ষণ-নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেনা শিশু-কিশোরী, স্কুল পড়ুয়া থেকে কলেজ ইউনিভর্সিটির ছাত্রী, খেটে খাওয়া শ্রমজীবি নারী, বয়স্কা-বিধবা। গার্মেন্টস কর্মী থেকে শুরু করে পাহাড়ি-উপজাতির সম্ভ্রম লুটে নিচ্ছে হিংস্র হায়েনারা। ঘরের কবাট ভেঙ্গে সিন্ধুক ছিনিয়ে নেয়া ডাকাতের মতো ওরা ছিনিয়ে নিচ্ছে সব, আর জাতির বিবেকের নির্লজ্জ আস্ফালন “সবার ঘর রক্ষার দায়িত্ব কি সরকারের”?
সাধারণ জনতা হতবাক, এ ওর দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে, তারপর নিজেরা শিক্ষা নেয়, “এখন কেউ না আমরা কারোর তরে, আগে যেমন ছিলাম সবার তরে” আর এভাবেই পন্ডিত মশাইয়ের প্রবীণ শিক্ষাগুলো পাল্টে যেতে থাকে, শিশু-কিশোরের পাঠশালার পাঠ্য বইতে শেখান হয় ভুল অনুশীলন, আগামীর ভবিষ্যত এখনই হচ্ছে আঁধারে পতিত।
তবু আমরা আশায় থাকি, এক দিন পাল্টে যাবে সব প্রেক্ষাপট, আর কোন পোশাক কারখানা ধসে প্রাণ হারাবে না নিরীহ শ্রমিকেরা, ব্যাংক থেকে হবে না হরি লুট, এ্যাকসিডেন্টে অথবা সন্ত্রাসীর এলোপাথারি গুলির আঘাতে কারো হবে না স্বপ্ন-ভঙ্গ, মুছে যাবে না কারো সিঁথির সিদুর, রাজনৈতিক আশ্রয়ে পুষ্ট হবে না ভন্ড মতবাদ, ফেরারী খুনি আসামি অথবা গুপ্ত ঘাতকেরা পাবেনা নির্বিচারে খালাস, অসুস্থ বিনোদনে রাতভর মাতালের প্রলাপে ভয়ার্ত হবেনা সাধারন মানুষ, সস্তা মেকাপ আর উৎকট গন্ধ গায়ে মেখে রাত জাগা প্রজাপতির নির্লজ্জ চিৎকার শোনা যাবে না আর, মখমলের ফুলসজ্জা ভিজবেনা অসুস্থ রক্তে। যান্ত্রিক কোলাহলে আড়ষ্ট হবেনা ভুমিষ্ঠ সন্তান, ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাবে নিরাপদে, হাসপাতালগুলো হবে নিরাপদ, আইন ব্যবস্থা হবে স্বচ্ছ।
এসব তো গেল প্রত্যাশার কথা, মানে স্বপ্নীল পরিবর্তনের আশায় পথ চেয়ে থাকা, কিন্তু বাস্তবতা প্রতিদিন শেখাচ্ছে মন্দের দ্বারা প্রভাবিত হতে। আমাদের বাংলা অভিধানের খুব ছোট্ট কিছু শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে আশ্চর্য শক্তির গভীরতা, তার মধ্যে একটি শব্দ হচ্ছে “প্রভাবিত”। শব্দটি ছোট হলেও অনায়াসে এই শব্দটি দ্বারা সৃষ্টি করা যায় জটিল প্রশ্ন। যেমন – কার দ্বারা তুমি প্রভাবিত হচ্ছো? কিসের দ্বারা? কেন?
এই অজস্র “কেন” গুলো শুধু কষ্ট হয়ে ফিরছে, মনের ভেতরে বাড়ছে যন্ত্রনা। অভিমানের মানুষগুলো নীরবে হয়ে পড়ছে একাকী ছন্নছাড়া, নিজেতে আত্মগমন। কিন্তু সত্যিই কি পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে নিজেরও এমন প্রভাবিত হওয়া সম্ভব? সত্যিই কি নিজস্ব চিন্তার পরিবর্তন আসে? আসলে নিজ ভূবনে আমরা সবাই একাকী ছন্নছাড়া। সব মানুষের নিজের একটা পৃথিবী আছে, যে পৃথিবীর সীমারেখা জানে না অন্য কেউ, জানে না কি তার বর্ণ, কি তার ধর্ম-এ যেন এক পূর্ণ-যৌবনা নদী। নিজ গতিতে অবিরাম ছুটে চলা। কখনও বাধা এলে নিজ নিয়মেই গতির পরিবর্তন, পথ পরিবর্তন।
কিন্তু যদি আমরা জানতে পারি আমাদের ভিতরের সত্ত্বা, চিনতে পারি তাকে- তবে আমাদের মন্দের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ভয় থাকে না। আসলে আমাদের মনের গভীরেই মন্দ চিন্তার উৎপত্তি যা আমাদের পাপের পথে টেনে নেয়। আর এক সময় এই পাপেরই নৃশংস প্রকাশ ঘটে আমাদের ব্যক্তি জীবনে-আমাদের সমাজ জীবনে। অহংকার, লোভ-লালসা, মিথ্যাচার, গর্ব, হিংসা প্রকাশ পায় প্রতিনিয়ত। আর এভাবেই আমরা মন্দতাকে প্রতিহত করার বদলে নিজেরাই প্রভাবিত হয়ে পড়ি মন্দের দ্বারা; তাই সমাজ-সংসারে বাড়ে মন্দতার প্রভাব, বাড়ে নৃশংসতা। শূন্যতা ভারি হয় বুকের গহিন কোনে।
এ থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে, সত্যের কাছে আসতে হবে। দরজাতে আঘাত করতে হবে। কে আমাদের অন্তর গভীরের লুকায়িত পাপ থেকে মুক্ত করতে পারে?
এসো, উত্তর খুঁজে পেতে আমাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি। এসো, আর একবার খুঁজে দেখি সম্পূর্ন ফুরিয়ে যাবার আগে। নিশ্চয় আমাদের সৃষ্টিকর্তা অনেক মহান, তিনি কখনও আমাদের ছেড়ে যাবেন না, অথবা ছুঁড়ে ফেলবেন না অনিশ্চিত আঁধারে। তিনি আমাদের ভালবেসে সৃষ্টি করেছেন, ধ্বংস হবার জন্য নয়। তাই ফিরে আসতে হবে সত্যের কাছে, বেড়ে উঠতে হবে সুন্দরের সাথে; অন্তর ঘরে লুকিয়ে রাখা মিথ্যের অন্ধকার, আমাদের গোপন পাপের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, অনুশোচনা করতে হবে, মন্দতার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ক্ষমা চাইতে হবে; স্রষ্টার কাছে সাহায্য চেয়ে বাড়াতে হবে দুটি হাত।
- Why is so much moral degradation? - August 26, 2019
- কেন এত নৈতিকতার অবক্ষয়? - August 26, 2019
- Why do we prioritize our self-interest first? - July 11, 2018