সৃষ্টিকর্তা কি আছেন!
গেল বছর ইউ-টার্ণ ক্লাবের উদ্যোগে বাৎসরিক বনভোজনে গিয়েছিলাম আমরা সবাই। চমৎকার একটি খোলা জায়গা পেয়ে আমরা সবাই আনন্দে দিশেহারা।
আমরা বসেছি সান-বাধাঁনো পুকুর ঘাটে, ছোট্ট একটি দল। একথা-সেকথা হাসি-গানে সময় গড়িয়ে চলেছে, সবার ভালো-মন্দের খবর নেয়ার পর্ব চলছে, এর মধ্যেই রাতুলের একটি প্রশ্নে আমরা কিছুটা সময় থমকে গেলাম! এ-ওর মুখের দ্বিকে নির্বাক চেয়ে আছি, প্রশ্ন শুনে কাব্য খুব উত্তেজিত, রাগ সামলাতে পারছেনা, ঝাঝাঁলো স্বরে বলে ওঠে, এ-তুই কি কথা বলিল রাতুল ?
রাতুল বলে কেন কথাটাতো খুব সোজা। বলছি সত্যি কি সৃষ্টি কর্তা আছে?
কাব্যের রাগ আরো চড়া হয়ে গেল, কি করবে, কি করা উচিৎ তার মাথায় আসছেনা, বেটা তুই একটা নাফারমান, কাফের, জালিম, তুই-তুই একটা নাস্তিক হয়ে গেছিস।
আমার কাছে কিন্তু মনে হচ্ছিল, কাব্য রাতুলের কথাটা যে অর্থে ধরেছে, রাতুল মনে হয় সেই অর্থে বলে নি। ওর গলার স্বরে মনে হচ্ছিল অন্য কিছু আছে। কাব্যকে তাই ধৈর্য্য ধরতে বললাম, আগ্রহ নিয়ে রাতুল কে জিজ্ঞাসা করলাম, বলতো তোমার কি হয়েছে, আসলে তুমি কি বলতে চাইছ ?
রাতুল: আসলে বলছিলাম কি, পৃথিবীতে এতো মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা রয়েছে। সেখানে সব সময় মানুষ ছুটে যায় সৃষ্টিকর্তাকে পাবার জন্য, কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কেন আমাদের ভাঙ্গা ঘরে আসেনা, আমাদের কুড়ে ঘরে, ভাঙ্গা বস্তিতে, সৃষ্টিকর্তা কেন আসেনা আমাদের দরিদ্র পরিবারে, অসুস্থ পরিবারে? তাহলে কি সৃষ্টিকর্তা নেই ?
আমার খুব কৌতুহল হলো, রাতুলকেই জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা যদি এমনটিই হতো তাহলে ব্যাপারটা কেমন হতো ।
রাতুল: বাহ্ তাহলেতো কত মজা হতো, আমরা সরাসরি সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের প্রয়োজন, চাওয়া-নাপাওয়া সব তাকে জানাতে পারতাম!
আমি বললাম, তা-কি এমন দরকার তোমার যার কারনে এই হা-হুতাশ?
রাতুল বল্লো, আসলে চারিদিকে সবাই কত সহজে সব করে ফেলছে, অন্যায়, লোভ-লালসা, মিথ্যা-অহংকার করছে তারপরো কত সহজে সব পেয়ে যাচ্ছে ওরা। যাদের পেশির শক্তি আছে তারা সহজেই সাফল্যের চূড়ায় উঠে যাচ্ছে, আর আমি পরে আছি একা নিঃস্বতার সাথে, এভাবে কি জীবন চলে?
আমার কষ্ট হতে লাগলো, ওকে বললাম দেখ রাতুল তুমি যেভাবে প্রশ্ন করেছ তার অর্থ কাব্য ভিন্ন ভাবে ধরেছে, আসলে এমনটিই হয়, আমরা কেও বলতে ভুল করি, আবার কেও বুঝতে, তবে একটি কথা তোমার জানা আছে-কিনা তা হচ্ছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা কিন্তু ঠিকিই মূসা(আ:)কাছে একাধিক বার এসেছিলেন, সমগ্র মানব জাতীর কল্যানের জন্য তিনি তার মাধ্যমে দশ তরীকা দিয়েছিলেন।
একাধিক বার তিনি তার আশ্চার্য কাজের মধ্য দিয়ে মানব জাতীর মধ্যে তাঁর পবিত্র উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন। এর পরও কেও কেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করবে, পবিত্র কিতাবুল মোকাদ্দাসে জবুর শরীফে ১৪:১ আছে, “যাদের মন অসাড় তারা ভাবে সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই।
পবিত্র কিতাবে এও বলা আছে, লোকেরা সুস্পষ্ট ও অপরিত্যাজ্য সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান পরিত্যাগ করবে এবং তার বদলে মিথ্যাকে বিশ্বাস করবে।
পবিত্র ইজ্ঞিল শরীফে উক্ত আছে যে “সৃষ্টিকর্তার সত্যকে ফেলে তারা মিথ্যাকে গ্রহণ করেছে। সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দিয়ে তাঁর সৃষ্ট জিনিষের পূজা করছে, কিন্তু সমস্ত প্রশংসা চিরকাল সেই সৃষ্টিকর্তারই। তো সেদিক থেকে দেখলে মানুষ কিন্তু সত্যিই সৃষ্টিকর্তার এবাদত ভুলে গিয়ে তার সৃষ্ট জিনিষের জন্য ব্যস্ত হয়ে পরেছে, ভোগ-বিলাস, ক্ষমতার অহঙ্কারে লিপ্ত হয়ে পরেছে, মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে মানুষ হয়ে উঠছে হিংস্র, বর্বর। এই কারণে কেউ ক্ষনিকের ধন দৌলত কেই আকঁড়ে ধরছে, আবার কেউ কেউ অন্যের সেই ধন-দৌলত প্রাচুর্য্য দেখে নিজের অবস্থান থেকে হা-হুতাশ করছে, দুঃক্ষে-কষ্টে সৃষ্টিকর্তাকে অপবাদ দিচ্ছে।
তবু আমাদের সৃষ্টিকর্তা দয়াবান, তিনি ক্ষমা করতে ভালবাসেন, যার ফলস্রুতিতে তিনি সমগ্র মানব জাতীর জন্য খুলে দিলেন একটি সত্যের পথ, অনন্ত জীবনের পথ। আর তিনি বলেন, যে কেহ আমা-হতে আসে সে কখনো বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন লাভ করে। তিনি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন সেইপথ এবং বলেন চাও তোমাকে দেয়া হবে, খোঁজ করো পাবে, দরজায় আঘাত করো খোলা হবে।
রাতুলের মাথায় হাত রেখে বল্লাম, মনে কোন সন্দেহ না রেখে তুমি সৃষ্টিকর্তাকে ডাকলে অবশ্যই তিনি তোমার ভাঙ্গা ঘরে আসবেন। তাকে স্বীকার করো তাহলে সেই তোমাকে তুলে ধরবে, তার অসীম উপস্থিতি তোমাকে জানান দেবেনে।
সহসা রাতুলের মনটা ভালো হয়ে গেল, মুখ দেখে মনে হলো অনেক দিনের জমে থাকা মেঘ সরে গেল, খুব ভালো লাগছে ওকে দেখে।
- Why is so much moral degradation? - August 26, 2019
- কেন এত নৈতিকতার অবক্ষয়? - August 26, 2019
- Why do we prioritize our self-interest first? - July 11, 2018