লিঙ্গ বৈষম্য চলছেই

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে লিঙ্গ বৈষম্য দীর্ঘ দিনের সমস্যা। লোকেরা মেয়ে শিশুকে বোঝা হিসেবে মনে করে কারণ তারা ভবিষ্যতে উপার্জনে সাহায্য করতে পারবে না। তারা বোঝা কারণ সংসারে অতিরিক্ত একজনকে খাওয়াতে হচ্ছে যে বিনিময়ে কোন টাকা আয় করতে পারবে না। তারা বোঝা কারণ কোন একদিন তাদেরকে বিয়ে দিতে হবে এবং বিয়েতে প্রচুর অর্থ খরচ হবে। ভবিষ্যত নিয়ে এই ধরণের নিম্ন ও অস্থির চিন্তা-ভাবনার কারণে অনেক মেয়ে শিশুর জীবন নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আর না!

সারা দেশের মহিলারা তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছে যে তারাও স্বাবলম্বী। তারা তাদের রিক্সাওয়ালা স্বামীদের দেখিয়ে দিচ্ছে, বাড়িতে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে তারাও যথেষ্ট টাকা আয় করতে পারে। তারা তাদের মধ্যবিত্ত ধ্যান-ধারণার পিতামাতাকে দেখিয়ে দিচ্ছে, তারাও শিক্ষা ক্ষেত্রে মূল্যবান রত্ন হয়ে উঠতে পারে। তারা সমাজকে দেখিয়ে দিচ্ছে তারাও চিন্তা করতে সক্ষম এবং মহৎ ও সুস্থ মনের অধিকারী। তারা প্রত্যেক ক্ষেত্রে সমতা প্রদর্শন করছে। কিন্তু তারপরও তাদেরকে আর উদ্যমী হতে হবে এবং দেখাতে হবে সত্যিকার অর্থে কতটুকু নেয়া সম্ভব। কেন তাদেরকে এত বেশি করতে হবে? কারণ সমাজ এমনভাবে চালিত হচ্ছে যে একটি মেয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করলে বাবা তাকে খরচ হিসেবে দেখছে যা একটি ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে হচ্ছে না। মহিলারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখছে কিন্তু তাদেরকে আরও বেশি কিছু দিতে হবে  যাতে সম্মান এবং মর্যাদার আসন কিংবা অন্তত শ্রদ্ধা অর্জন করা সম্ভব।

বর্তমান সময়ের পত্রিকাগুলো খুললেই নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা চোখে পড়ে। কিছুদিন আগে একটি বিবাহিত মেয়ের কথা লেখা হয়েছিল যে পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল বলে তার হাতের আঙ্গুল কেটে দেয়া হয়েছিল; আবার আরেকটি খবরে একজন স্বামী যৌতুকের জন্য তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে যে নিজে একজন স্কুল শিক্ষক। তাহলে সে কি ধরণের শিক্ষা দেয়? মেয়েদেরকে কেন অন্যের অধিকারে থাকতে হয়? শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে তাদের উপর নির্যাতন করার অধিকার পুরুষকে কে দিয়েছে? মেয়েরা-ই তাদেরকে এই অধিকার দেয়। নিজেদের অধিকার রক্ষায় তাদেরকে এক হতে হবে। নিজেদেরকে আরও বেশি জাহির করতে হবে এবং শুধুমাত্র অনুগত ঘরনী হয়ে পুরুষের হুকুম পালন করার চেয়েও নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে যে তারা গুরুত্বপূর্ণ, তারাও চিন্তা করতে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। এবং পরিবর্তন দরকার, অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং পরিবর্তন।

এখানে আপনারও ভূমিকা রয়েছে। আজকের নারী সমাজকে মর্যাদা দিন এবং তাদের শক্তি উপলব্ধি করুন। অত্যাচারী শক্তি নয় বরং মুক্তকারী শক্তি। একটি মেয়ে শিশুকে তার উজ্জ্বলতা ও জগত সম্পর্কে তার অর্ন্তদৃষ্টির জন্য প্রশংসা করুন। কোন বিধবাকে ছোট না করে তাকে সাহায্য করুন, কোন বৃদ্ধাকে উপহাস না করে সহযোগিতা করুন। উভয় লিঙ্গের শক্তি এবং সবার সমান অধিকার সম্পর্কে লোকদের উৎসাহিত করতে আপনারও ভূমিকা রয়েছে।

chief-producer
Latest posts by chief-producer (see all)

You may also like...